দশ সদস্য-বিশিষ্ট নারী সংস্কার কমিশন, যা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কার উদ্যোগের অংশ হিসেবে গঠিত, গত ৬ বৈশাখ ১৪৩২ / ১৯ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে ৩১৮ পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদন পেশ করেছে। কিন্তু এই প্রতিবেদন আদতে দেশের জন্য এক গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেন?
নারী সংস্কার কমিশনের উদ্দেশ্য: সংস্কার না, বরং অপসংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়া
এই তথাকথিত সংস্কারমূলক প্রতিবেদন ইউরোপ-আমেরিকার বিকৃত মূল্যবোধের ছায়ায় রচিত। তারা ‘নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর’ করার নামে নারীদের স্বাভাবিক কোমলতা, পারিবারিক বন্ধন, সামাজিক ভারসাম্য এবং ধর্মীয় রূপরেখা ধ্বংস করতে চায়। এ যেন একটি বিপজ্জনক সামাজিক প্রকল্প — যেখানে নারীকে পুরুষের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সহযাত্রী নয়।
ধর্ম, সমাজ ও মানবতার বিরুদ্ধে অবস্থান
প্রতিবেদনের কিছু ধারা-উপধারা হয়তো আংশিকভাবে উপকারী মনে হতে পারে, কিন্তু অধিকাংশই কুরআন-সুন্নাহ, ইসলামী সমাজব্যবস্থা, এবং মানবিক মূল্যবোধের পরিপন্থী। এজন্যই দেশের আলেম সমাজ, দ্বীনদার বুদ্ধিজীবী এবং সচেতন দেশপ্রেমিক জনগণ এই নীতিকে কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
এই নীতির পেছনে কারা?
এই বিতর্কিত নারী উন্নয়ন নীতি দেশের বাস্তবতা বিবেচনায় তৈরি হয়নি। বরং তা প্রণয়ন করা হয়েছে বিদেশি দাতা সংস্থা ও বিজাতীয় চাপে, যারা আমাদের সমাজে বিভ্রান্তি ও সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির অপচেষ্টায় লিপ্ত।
সমঅধিকার নাকি ন্যায্য অধিকার?
যদি সত্যিই এই নীতির লক্ষ্য হতো নারীর উন্নয়ন, তাহলে সেখানে ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করার কথা থাকত, সমঅধিকার নয়। নারীদের শ্রমবাজারে ঠেলে দিয়ে একদিকে যেমন পরিবার ভাঙনের পথ প্রশস্ত করা হচ্ছে, অন্যদিকে পুঁজিবাদী বাজারে সস্তা শ্রমিক তৈরি করা হচ্ছে — যাতে নারীরা কম বেতনে কাজ করে এবং পুরুষরাও বাধ্য হয় কম বেতনে কাজ করতে।
নারীনীতি কি আদৌ নারীর কল্যাণে?
নারীবাদীরা কেবল "সমতা"র বুলি আওড়াচ্ছে, কিন্তু আমাদের সমাজ, সংস্কৃতি ও ধর্মের সঙ্গে এর সাংঘর্ষিকতা তারা উপেক্ষা করেছে। বাস্তবতা হলো, নারী-পুরুষের জীবনের গঠনগত ও সাংগঠনিক পার্থক্য রয়েছে। তথাকথিত সমতার বাস্তবায়ন সমাজে অস্থিরতা, পারিবারিক অবক্ষয় এবং নারীর উপর নতুন রকমের শোষণ ডেকে আনবে।
উপসংহার
এই নারীনীতির নামে আমাদের সমাজে যে অপসংস্কৃতি চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে, তা প্রতিহত করতে হবে। আমাদের পরিবার, ধর্মীয় মূল্যবোধ, ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষার স্বার্থেই এই প্রস্তাবিত নীতি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যানযোগ্য। ইনশাআল্লাহ জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও আমরা এই নীতি বাস্তবায়ন হতে দিবো না।
ইনশাআল্লাহ, আমাদের পরবর্তী প্রতিবেদনে আমরা এই নীতির অসার ধারাগুলোর বিস্তারিত বিশ্লেষণ তুলে ধরব।
0 Comments